জয়ন্ত মন্ডল বীরভূম (খবর7দিন প্লাস):-বর্তমান অবস্থান,,গ্রাম পঞ্চায়েত জয়দেব কেন্দুলীর সর্বশেষ দক্ষিণ-পূর্ব গ্রাম সংসদ সন্তোষপুর এর অতি দক্ষিণে অজয়ের উত্তর তীরে এই কালু বীর মন্দিরটি অবস্থিত। পূর্ব প্রান্তে একটি সুবৃহৎ অশ্বত গাছ এবং অর্জুন জাতীয় একটি গাছের নিচে তিন দিক ঘেরা ইটের দেওয়াল যুক্ত ছাদ হীন বাধানো বেদি। যদিও এখন আঁকড়ে সম্প্রদায়ের মানুষজনেরা এই কালু বীরের মন্দিরটি সম্পূর্ণরূপে করতে না পারলেও আংশিক করেছে বলেই এমনটা দাবি করেছেন।
ধর্মমঙ্গলের তৃতীয় সর্গের নাম রঞ্ঝা বতির বিবাহ। ইছাই ঘোষের সঙ্গে যুদ্ধে কর্ণসেন তার ছয় পুত্রকে হারান। তার স্ত্রী আত্মঘাতিনী হন। কাতর কর্ণসনকে সংসারে ফেরাবার জন্য গৌড়েশ্বর নিজের শালিকা রঞ্জাবতীর সঙ্গে তার বিবাহ দেন। লজ্জাবতী সুকঠোর কৃচ্ছ্য সাধনা করে ধর্ম ঠাকুরের কৃপায় পুত্র লাভ করেন। এই পুত্রের নাম লাউ সেন। লাউসেন যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী হয়ে কালো বীর নামে বিশেষ যোদ্ধা ও বিরাট সৈন্যবাহিনী নিয়ে ইছায় ঘোষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে এলেন ১৩ই বৈশাখ শনিবার। লাউ গড়েতে স্নান করে ধর্মরাজ পূজা করে অজয় অতিক্রম করলেন। দেবীর নিষেধ ছিল, বার বেলায় যুদ্ধে যেতে নিষেধ কিন্তু উপায় ছিল না। শনিবার যুদ্ধ আরম্ভ হয়েছিল রবিবার যুদ্ধ শেষে ইছাই ঘোষ পরাজিত এবং নিহত হলেন।
কালু বীর প্রভু ভক্তি, স্বদেশপতি ,বিষধরতা, রণকৌশল ও বীরত্ব তাকে অমর করে রেখেছে। যুদ্ধ, বিগ্রহ ,অস্ত্রচর্চা ছাড়া অন্য কোন কাজ কালো বীরের পছন্দ ছিল না। কালো বীরের পত্নীর নাম লক্ষ্মী বা লখ্যা ডোম। তাদের বংশধরগণ অখিরা বা আ৺কুড়ে বলে খ্যাত। বীরভূম জেলার ইলামবাজার ব্লকের জয়দেব কেন্দুলী অঞ্চলের আকম্বা, সুগড়,ভুবনেশ্বর ,ডাঙ্গাপাড়া প্রবৃত্তি গ্রামে এরা বাস করেন। কাঠমিস্ত্রি ,চাষবাস ,চাকুরী বা রাজমিস্ত্রি কাজ এরা করে থাকেন। এছাড়াও ভুবন ডাঙ্গা বোলপুর ,সোনামুখী বাঁকুড়া, দুর্গাপুর ,গুসকরা প্রভিত্তি স্থান থেকে বহু আঁকুরে সম্প্রদয়ে মানুষ ১৩ ই বৈশাখ লাউসেন তলায় এসে সমবেত হন এবং স্থানীয়রা পূজা,প্যান্ডেল, মাইক ,পুরোহিত ,রান্না বান্না আয়োজন করেন। ইতিমধ্যে লাউসেন তলায় কালো বীরের স্মৃতি মন্দির নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়েছে। পূজা পাঠ বলিদান সবই হয় ধর্ম ঠাকুরের উদ্দেশ্যে। স্থানের নাম লাউ সেনতলা, বর্তমান আঁকুরে সম্প্রদায়ের কিছু শিক্ষিত গবেষক দাবি করেছেন যে কালবীর প্রকৃতপক্ষে কালোসেন। তিনি লাউসেনের বইমাত্র ভাই। যুদ্ধে দাদার হয়ে সেনাপতির দায়িত্ব নিয়ে এই জায়গায় এসেছিলেন তিনি। এই স্থানে অবস্থানকালে লক্ষী নামবি সুন্দরী এক ডোমের কন্যাকে পত্নী রূপে গ্রহণ করেন এবং পরে জাতিচ্যুত হয়েছিলেন। সেই সময়কাল থেকেই এই লাউসেন তলায় কালু বীরের মন্দির আজো বর্তমান অবস্থায় আছে এবং আকুড়ে সম্প্রদায়ের মানুষজনেরা প্রতি বছর ১৩ই বৈশাখ মহাসমারোহে পূজো অর্চনা করে থাকেন।।