বীরভূমের জয়দেব কেন্দুলীতে "গীতগোবিন্দ দিবস" উদযাপন, কবিদের আড্ডার ২৯ তম বর্ষপূর্তি উৎসব

 

জয়ন্ত মন্ডল বীরভূম:-আজ ১৬ জুন, বঙ্গাব্দের পয়লা আষাঢ়,বর্ষাঋতুর প্রথম দিন। আর এই দিনটি বীরভূমের বৈষ্ণব তীর্থক্ষেত্র জয়দেব-কেন্দুলী এলাকার মানুষের কাছে “গীতগোবিন্দ দিবস” হিসেবে চিহ্নিত। উল্লেখ্য, এই পয়লা আষাঢ় “মেঘদূত” লিখেছিলেন কবি কালিদাস, আর দ্বাদশ শতকে প্রেমের কবি জয়দেব গোস্বামী বীরভূমের এই কেন্দুলীর মাটিতে বসেই রচনা করেছিলেন কালজয়ী সংস্কৃত কাব্যগ্রন্থ “গীতগোবিন্দ”। যা বিশ্বের মানুষের কাছে আজও সমান সমাদৃত। কবি জয়দেবের জন্মভূমি অজয় নদের পাড়ে কেন্দুলীর ভক্তিভবনে জয়দেব অঞ্চল সংস্কৃতি সেবা সমিতির আয়োজনে এবারও এই পয়লা আষাঢ় সাড়ম্বরে “গীতগোবিন্দ দিবস” উদযাপিত হয়। 

জয়দেব ছিলেন রাজা লক্ষণ সেনের সভাকবি। মাত্র চার বছরের ছোট হলেও রাজা লক্ষণ সেনের সঙ্গে জয়দেবের সখ্য ছিল। তিনি ছিলেন রাজার প্রিয় বন্ধু। ১৩৯৯ বঙ্গাব্দ থেকে জয়দেব ধাম আশ্রম কমিটির দ্বারা জয়দেব কেন্দুলীর রাধা মাধব মন্দির প্রাঙ্গনে সাড়ম্বরে কবি জয়দেবের জন্মজয়ন্তী পালন করা হচ্ছে। শ্রী শ্রী রাধা মাধবের যুগল বিগ্রহকে সামনে প্রতিষ্ঠা করে জয়দেব পদ্মাবতী নেমবক প্রেম সাধনায় মগ্ন হন। রাধা কৃষ্ণের প্রেম সাধনার সূত্র ধরে বিরহ আর মিলন এবং সুমধুর ভাব ও ভাষা চর্চার মাধ্যমে চলতে থাকে শ্রী শ্রী গীতগোবিন্দের রচনা কার্য্য। গীতগোবিন্দ রচয়িতা কবি জয়দেব সংস্কৃত সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি এবং সংস্কৃত ভাষায় সর্বাপেক্ষা মধুর গীতি কবিতার কবি বলিয়া সর্ববাদী সম্মতিক্রমে সম্মানিত হইয়াছেন। অজয় নদীর উত্তরে ইলামবাজার ব্লকের জয়দেব কেন্দুলিতে এই রাধা বিনোদ মন্দির এখন অবস্থিত আছে।সেই সঙ্গে সাহিত্য আড্ডার ২৯ তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান। আসলে আমাদের কৃষিনির্ভর বীরভূম। আর বীরভূমের কৃষি মূলতঃ বৃষ্টিনির্ভর। ৭০ শতাংশ মানুষের জীবন-জীবিকা কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাই প্রতিবছর সুচারু বর্ষার প্রার্থনা করেন কৃষকের দল। আর এই বর্ষা ঋতুর আগমনকে বন্দনা করেই গীতগোবিন্দের সেই প্রথম শ্লোক মেঘৈমেদুরমম্বরম বনভুবঃ। এবারও বর্ষা শুরুর প্রথম দিনটিতে গীতগোবিন্দ দিবসে জয়দেব-কেন্দুলির ভক্তিভবনে বসে সাহিত্যের আড্ডা। জেলার বিভিন্ন প্রান্তের কবি, সাহিত্যিক,শিল্পীরা উপস্থিত হন অনুষ্ঠানে। সভাপতিত্ব করেন কবি ও গল্পকার অমর দে। গীতগোবিন্দের সুর দিয়ে সভার সূচনা করেন সাহিত্যিক শান্তি কুমার রজক। মুখকথা পরিবেশন করেন সমিতির সভাপতি রণজিৎ মুখোপাধ্যায়। এদিন গীতগোবিন্দ পাঠ, কথা,কবিতা,গান আলোচনা চক্র চলে সারা দুপুর। প্রকাশিত হয় বেশ কয়েকটি পত্র-পত্রিকা। এদিন গান, কথা, কবিতায় অংশ নেন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের কবি, সাহিত্যিক,শিল্পীরা। উদ্যেক্তাদের পক্ষ থেকে কবি গোলাম রসুল, নাট্যকার মলয় ঘোষ সহ শৈলেন মিশ্রকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়। অনুষ্ঠানটির প্রতিবছরের মতো এ বছরও একই দিনে গীতগোবিন্দ দিবস পালিত করা হলো।।



নবীনতর পূর্বতন