কেনো রবিবার কে ছুটির দিন হিসেবে ধরা হয় ? সপ্তাহের আর বাকি দিন গুলোকে কেনো নয় ?

 


বিশেষ প্রতিবেদন : কেনো রবিবার কে ছুটির দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয় ? এর পিছনে অবশ্যই  রয়েছে খ্রিস্টধর্মের প্রভাব। বাইবেল মতে ৬ দিন ধরে পৃথিবী সৃষ্টি করার পর  ঈশ্বর ষষ্ঠ দিনে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। তাই রবিবারকে বিশ্রামের দিন বলে খ্রিস্টধর্মে গণ্য করা হয়। ওইদিনই ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টানরা চার্চে গিয়ে প্রার্থনা করেন রবিবার নিয়ম করে চার্চে যেতে পারেন, সেই কারণেই খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী ইউরোপের দেশগুলিতে প্রথম চালু হয় রবিবারের ছুটি।যদিও সব দেশে রবিবার ছুটি থাকে না । বিশেষ করে মুসলিম দেশ গুলিতে ।  মুসলিমদের পবিত্র দিন শুক্রবার  তাই শুক্রবারকে ছুটির দিন হিসেবে ধরা হয় । আবার ইহুদিদের বিশেষ দিন শনিবার তাই ইসরায়েলে শনিবার ছুটি থাকে । রবিঠাকুর শান্তিনিকেতনে বুধবার ছুটি রাখার নিয়ম করেছিলেন, যেটি বর্তমানে এখনও মেনে চলা হয়।


তবে ভারতে রবিবার কে ছুটির দিন হিসেবে গণ্য করার ইতিহাস টা একটু অন্যরকম । সেই ব্রিটিশ আমল থেকে রবিবার কে ছুটির দিন হিসেবে গণ্য করা শুরু হয়। তবে রবিবারকে ছুটির দিন হিসেবে পাওয়ার বিষয়টি এতো সহজ ছিল না। এর জন্য অনেকটা লড়াই করতে হয়েছে।


প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশরা ভারত শাসন করেছিল। সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য দেশে অনেক কলকারখানা, কারখানা তৈরি করেন ব্রিটিশরা।সে সময় কারখানার শ্রমিকদের সপ্তাহের সাত দিনই কাজ করতে হতো এবং শ্রমিকদের জন্য কোন আলাদা ছুটি থাকত না। তবে ব্রিটিশ কর্মচারীরা প্রতি রবিবার গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করতেন। এই বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি তখনকার শ্রমিক নেতা শ্রী নারায়ন মেঘাজি লোখন্ডে ।


শ্রী নারায়ন মেঘাজি লোখন্ডে ব্রিটিশ অফিসারদের কাছে সপ্তাহের ছয় দিন কাজ করানোর প্রস্তাব রাখেন। এবং সপ্তাহে একদিন কর্মচারীদের ছুটি দেওয়ার জন্য বলেন । ব্রিটিশরা যেহেতু ঐদিন গির্জায় গিয়ে প্রার্থনা করতেন তেমনভাবে তিনি একটি কারণ উপস্থাপন করেন।তিনি বলেন রবিবার দিনটি হিন্দু দেবতা "খন্ডকার" এর জন্মদিন। এই জন্য ওই দিনটিকে ছুটির দিন হিসেবে বিবেচনা করা হোক।


ওনার এই প্রস্তাব ব্রিটিশ সরকার সহজে মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু তিনি এখানেই থেমে থাকেননি কর্মীদের ছুটির জন্য আরও সাত বছর লড়াই করেন। অবশেষে তার প্রস্তাবকে মেনে নিতে বাধ্য হয় ব্রিটিশ সরকার। এরপর ব্রিটিশ সরকার ১৮৯০ সালের ১০জুন শ্রমিকদের ছুটি ঘোষণা করে । ওনার কারণেই মাসের ১৫ তারিখে বেতন এবং খাওয়ার জন্য আধঘন্টা সময় চালু করা হয়।




ব্রিটিশরা দেশ থেকে চলে গেলেও সেই নিয়ম আর বদলায়নি। তারপর ১৮৯০ সাল থেকেই প্রত্যেক সপ্তাহের রবিবার করে ছুটির দিন চলে আসছে।


শ্রী নারায়ন মেঘাজি লোখন্ডের কাছে আমাদের সকলের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। উনি না থাকলে হয়তো এখনকার দিনেও সপ্তাহের সাত দিনই চলতো স্কুল ,কলেজ, সরকারি অফিস এবং কার্যালয়। এবং মানুষের হাতে অবসর সময় বলতে কিছুই থাকতো না।

নবীনতর পূর্বতন