বিশেষ প্রতিবেদন : সনাতন ধর্মে যেসমস্ত দেব দেবীর আরাধনা করা হয় তাদের মধ্যে মা কালী অন্যতম । তবে মা কালীর রূপ অন্য দেবীদের থেকে অন্যরকম । তার গাত্র বর্ণ অন্যরকম এবং তার শরীরে কোনো আবরণ থাকে না । এছাড়াও তিনি তার বিশাল বড় জ্বিভ বাইরে বের করে রাখেন । এবং তিনি নরমুন্ড মালা ধারণ করেন ।
দেবী কালীর এই উগ্র রূপের কারণ কি ? তার এই জ্বিভ কেনো বাইরে বেরিয়ে থাকে ?
মা কালী দশ মহাবিদ্যার অন্যতম প্রধান রূপ। তিনি দেবী দূর্গার ওপর একটি রূপ । দেবী দূর্গা বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন যুগে অসুর বধ করেছেন ।
এমনই একসময় মা মহামায়া আসুর নিধনে অবতীর্ণ হন । নিজের রুদ্র রূপ ধারণ করেন এবং দেবতাদের বরাভয় প্রদান করেন । কিন্তু সকল অসুরেরা যখন একত্রে মিলে যুদ্ধ শুরু করে মা মহামায়া খুবই ক্রুদ্ধ হন ।
এই সময় দেবীর তৃতীয় নেত্র থেকে জন্ম হয় এক অত্যন্ত রুদ্র মূর্তি । এবং এই মূর্তির নামই হলো মা কালিকা অথবা মা কালী।
মা মহামায়া তার কালিকা রূপে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন । এবং একের পর এক অসুর বধ করতে থাকেন । একপ্রকার তাণ্ডবলীলা চালান তিনি । এবং অসুরেরা বুঝতে পারে যে তারা দেবীর সাথে যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারবে না । অসুর হত্যা করে মা নিজের গলায় তাদের মুণ্ড একহাতে ধরেন ও নরমুন্ড এর মালা নিজের গলায় পরিধান করেন ।
অসুরের হাত কেটে তিনি তার পোশাক বানিয়ে পরিধান করে নেন তার নিম্নাঙ্গে । এই অবস্থায় অসুরেরা খুব চিন্তায় পরে ।
এই সময় শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামের দুই অসুর তাদের সেনাপতি রুদ্রবিজ কে রণক্ষেত্রে অবতীর্ণ করেন । রুদ্রবিজ ছিল দেবী কালীর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য এক অন্যতম ও ভয়ঙ্কর অসুর । এই অসুর প্রজাপতি ব্রহ্মার বরে পেয়েছিল এক অন্যতম বরদান ।
বরটি ছিল এরকম যে , রক্তবীজ কে কোনো দেবতা অস্ত্র বা তলোয়ার দিয়ে মারতে পারবেন না । কারণ যদি তার শরীর থেকে কোনো রক্ত ঝরে তাহলে , সেই রক্ত থেকে আরও একটি রক্তবীজ তৈরি হবে । অর্থাৎ এক প্রকার অমরত্বের বর পান তিনি ব্রহ্মার থেকে ।
এইরূপ বরশালী রক্তবীজ কে দেখামাত্রই মা তার রুদ্ররুপ ধারণ করেন এবং তাকে হত্যা করতে উদ্যোগী হন । মা কালীর খরগের আঘাতে যখন রক্তবীজের শরীর ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় , তখন তার রক্ত থেকে শত শত রক্তবীজ জন্ম নিতে থাকে । মা কালী বুঝতে পারেন এই অসুরের বরের কথা ।
এরপর মা রক্তবীজ কে হত্যা করার পর তার পুরো রক্ত নিজে খেয়ে ফেলেন । এই ভাবে তিনি সফল হন রক্তবীজ কে হত্যা করতে ।
এরপরই শুরু হয় মার তাণ্ডবনৃত্য । যার ফলে স্বর্গ , মর্ত , পাতাল সমগ্র ত্রিলোক কাপতে থাকে । দেবতারা যখন এই তাণ্ডব নৃত্য দেখেন তারা বুঝতে পারেন সারা পৃথিবী জুড়ে এক প্রলয় আসতে চলেছে । যা তাদের পক্ষে রোধ করা সম্ভব নয় ।
এমন অবস্থায় তারা ছুটে যান দেবাদিদেব মহাদেবের কাছে । এবং মা কালীর এই প্রলয় শান্ত করার জন্য অনুরোধ করেন । মহাদেব যখন দেখেন মা কালী ক্রোধে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য , তিনি আর উপায় না দেখে মা এর পায়ের কাছে তার দেহ শায়িত করেন । তাণ্ডব নৃত্য করতে করতে মা যখন ভগবান শিবের বুকে পা রাখেন তখন এক প্রকার সম্বিৎ ফিরে পান ।
যখন তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি তার স্বামীর বুকের উপর পা দিয়ে দাড়িয়ে আছেন , লজ্জায় তার জিভ সামনে বেরিয়ে আসে ।
আর এই ভগবান শিবের বুকে পা দিয়ে জ্বিভ বের করা মা কালীর মূর্তিই আমরা প্রত্যক্ষ করি বিভিন্ন চিত্রকলায় ও বিভিন্ন মূর্তিতে । এবং মা এর এই রূপই জগতপ্রসিধি হয় ।