বিশেষ প্রতিবেদন : যিনি জগৎকে ধারণ করেন তিনিই হলেন মা জগদ্ধাত্রী , জগতের মাতা বা বালিকা । শাস্ত্র মতে তিনিই দুর্গার ওপর রূপ । উপনিষদে তার নামই হলো হুমা হৈমবতি । কার্তিক মাসের শুক্লা নবমী তিথিতে দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের ধর্মীয় মতে রাজসিক দেবী হলেন দুর্গা । তামসিক কালীর পরেই স্থান সপ্তগুনের দেবী জগদ্ধাত্রীর ।
দেবী জগদ্ধাত্রীর পূজোর সময় কোন কোন বিষয় গুলো আপনি মাথায় রাখবেন যার ফলে মা জগদ্ধাত্রীর কৃপা আপনার উপর সদা বর্ষিত হবে :
জগদ্ধাত্রী দেবী ত্রিনয়না , চতুর্ভুজা ও সিংহ বাহিনী । তার হাতে শঙ্খ , চক্র , ধনুক ও বান । তার বাহন হলো দেবী দুর্গার মতনই সিংহ । সেই সিংহ করিদ্রাশুর নামে হস্থিরুপী অসুরের পিঠে দন্ধায়মান । দেবীর গাত্রবর্ন উধিয়মান সূর্যের ন্যায় ।
শাস্ত্রমতে মহিষাসুর বধের পর দেবতারা আনন্দ উৎসবে মত্ত ছিলেন । দেবী দুর্গা অসুরকে বধ করেছিলেন ঠিকই কিন্তু দেবী ছিলেন দেবতাদের সম্মিলিত শক্তির প্রকাশ । ফলে দেবতারা এমন একটি ভাব করছিলেন যেনো এই কৃতিত্ব তাদের । দেবতাদের এই মূর্খ আস্ফালন দেখে দেবী অলক্ষ্যে থেকে একটি ঘাসের টুকরো ছুড়ে দেন তাদের দিকে । ইদ্র তার বজ্র দিয়েও সেই টুকরো নষ্ট করতে পারলেন না । বায়ু পারলেন না ওড়াতে , অগ্নি পারলেন না পোড়াতে। বরুণ দেব ও পারলেননা সেটিকে বসিয়ে দিতে । শেষে তাদের সামনে আবির্ভূতা হলেন পরমা সুন্দরী চতুর্ভুজা দেবী । তিনিই হলেন দেবী জগদ্ধাত্রী । দেবতারা বুজলেন এই দেবী এই জগতেরই ধারিত্রী দেবী ।
আরও একটি মতে মহিষাসুর বিভিন্ন রূপে এসে দেবী কে বিভান্ত্র করেছিলেন । যখন মহিষাসুর হাতির রূপ ধরেছিল তখন দেবী তখন ধারণ করেছিলেন এক চতুর্ভিজা দেবীর রূপ । চক্র দিয়ে তিনি পুড়িয়ে দিলেন হাতির রূপ । যিনি দেবী জগদ্ধাত্রী তিনিই দেবী দুর্গা ।
দুর্গা পুজোর যে সমস্ত নিয়ম বা উপাচার গুলি রয়েছে সেই গুলি জগদ্ধাত্রী পুজোয় পালন করা হয় ।
যদি আপনার সাধ্য বা সামর্থ্য থেকে তাহলে অবশ্যই জগদ্ধাত্রী পূজোয় এই জিনিস গুলো করার
চেষ্টা করুন :
১) জগদ্ধাত্রী পূজোর সময় চেষ্টা করুন সাত্ত্বিক আহার গ্রহণ করতে । বিশেষ করে অষ্টমী ও নবমী তিথিতে । এই দিনে নিরামিষ আহার গ্রহণ করার চেষ্টা করুন ।
২) এই পূজোর সময় বিশেষ করে অষ্টমী ও নবমী তিথিতে সদ্য মতো দরিদ্র মানুষ কে দান করুন । তা বস্ত্র বা অন্ন যা কিছু হতে পারে । কখনোই কোনো ভিখারিকে খালি হাতে ফেরাবেন না । কোনো মন্দিরেও আপনি কিছু দান করতে পারেন। বিশেষ করে জগদ্ধাত্রী মন্দিরে আপনি যদি দান করেন সেটি অত্যন্ত ভালো হবে আপনার ক্ষেত্রে । যদি সম্বভ হয় তাহলে আপনি এই অষ্টমী ও নবমী তিথিতে কোনো কুমারী কন্যা কেও কিছু উপহার দিতে পারেন । তবে খেয়াল রাখবেন এই কুমারী কন্যার বয়স যেনো ১৪ বছরের কম হয় ।
৩) আপনার ঘরে যদি কোনো সধবা মহিলা থাকে বা যেকোনো সধবা মহিলাকে আপননি একটি শাড়ি উপহার দিতে পারেন । তবে অবশ্যই আপনার সাধ্য মতন ।
৪) এর সাথে আপনার বাড়িতে যদি শঙ্খ না থাকে তাহলে আপনি এই দিন একটি শঙ্খ কিনতে পারেন । অষ্টমী বা নবমী তিথিতে শঙ্খ কিনলে খুবই শুভ হবে আপনার জন্যে ।
৫) এই জগদ্ধাত্রী পুজোয় এই অষ্টমী নবমী তিথিতে কখনোই মধ্যপান করবেন না । এই তিথিতে মধ্যপান করা খুবই অশুভ । মদ্যপান করার মাধ্যমে আপনি নিজের দুরভাগ্য নিজেই ডেকে আনবেন । তাই চেষ্টা করবেন মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে ।
৬) এরপর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো , দশমীর দিন আপনি যেকোনো মায়ের মন্দিরে গিয়ে সিদুরের কৌটো ও এক টাকার কয়েন ও কিছু অপরাজিতার ফুল নিয়ে মায়ের উদ্দেশে পূজো দিন এবং মায়ের পায়ে । এবং মায়ের পায়ে এই সমস্ত কিছু জিনিস অর্পণ করুন। মায়ের পায়ে যে অপরাজিত ফুল দিচ্ছেন সেই ফুলের কিছু অংশ আপনি বাড়িতে নিয়ে এসে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কোনো স্থানে রেখে দেবেন । এর পাশাপাশি আপনি মায়ের পায়ে যে সিঁদুর অর্পণ করেছেন , সেই সিঁদুর দিয়েই চেষ্টা করুন সিঁদুর খেলার । এবং বাকি কিছু অংশ নিয়ে আসুন বাড়িতে , এবং পূজোর স্থানে রেখে দিন ।
এই সমস্ত নিয়ম উপাচার আপনার সাধ্য ও সামর্থ্য মতন ভক্তি ভরে পালন করলে মায়ের কৃপা আপনার উপর সদা বিরাজ করবে