সনাতন ধর্মের সবচেয়ে কঠিন ব্রত ছট পূজো । কিভাবে শুরু হয়েছিল এই পূজো ?

 

বিশেষ প্রতিবেদন : পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড়ো উৎসব দূর্গাৎসব। এর পরই একেএকে লক্ষ্মী পূজো , কালী পূজো এবং তার পরেই আসে ছট পূজো । ভারতের বিহার ও ঝাড়খণ্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বড়ো উৎসব হলো ছট পূজো ।

    ছট পূজো কে হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে কঠিন ব্রত বলে মনে করা হয় । চার দিন ব্যাপী এই মহা উৎসবের শুরু হয় প্রথম দিন স্নান , দ্বিতীয় দিন খরনা , তৃতীয় দিন সন্ধ্যা অর্ঘ্য এবং চতুর্থ দিন ঊষা অর্ঘের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় । 


      কিন্তু কি এই ছট পূজোর ইতিহাস ?


    ছট পূজোর পেছনে আছে এক পৌরাণিক কাহিনী । একসময় প্রিয়োপদ নামে এক রাজা ছিলেন ।তার কোনো সন্তান ছিল না । এই সময় মহর্ষি কাশ্যপ রাজাকে একটি যজ্ঞ করতে বলেন । এবং রাজার স্ত্রী মানিলিকে উপাসনার জন্য ক্ষির দিয়েছিলেন । উপাসনা করে মালিনী একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেয় । কিন্তু দুর্ভাগ্য বসত সেই সন্তানটি ছিল মৃত । প্রিয়োবদ সেই মৃত সন্তানকে নিয়ে শশানে যান। এবং নিজের প্রাণ ত্যাগ করার কথা ভাবেন । 

   ঠিক সেই সময়েই ভগবানের মানস পুত্রি দেবসেনা প্রকট হন এবং বলেন যে তিনি মহা বিশ্বের ষষ্ঠ অংশ থেকে জন্মগ্রহণ করেছেন । এই কারণে তাকে ছটি বলা হয় । 


  দেবী ছটি তাকে বলেন । আপনি আমার উপাসনা করুন ।এবং মর্তে আমার উপাসনা করতে অন্যদের অনুপ্রাণিত করুন । তাহলে আপনার পুত্রের প্রাপ্তি ঘটবে । 


রাজা প্রিয়বদ পুত্র সন্তান লাভের আশায় তার পূজো করেন।  এবং পুনরায় তার পুত্র সন্তান লাভ করেন।  


        মানা হয় এর পর থেকেই শুরু হয় ছট পূজো । 


ছট পূজোর ইতিহাস নিয়ে আরোও একটি পৌরাণিক কাহিনী আছে । মানা হয় ভগবান রাম ও মাতা সিতা চোদ্দো বছর বনবাসে থাকার পর রাবণ বধ করে যখন অযোধ্যায় ফিরে আসেন ,ঠিক সেই সময় রাবণ বধের পাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৠষিগণের আদশে সূর্য পূজো করেন।  


   মাতা সীতা কার্তিক, শুক্ল তিথিতে এই ব্রত রেখেছিলেন এবং ছয় দিন ধরে সূর্য পূজো করেছিলেন ।এর পর থেকেই শুরু হয় ছট পূজো। 


  আরেক কাহিনী অনুসারে , সূর্য পূত্র কর্ন সর্ব প্রথম ছট্ পূজো শুরু করেছিলেন । তিনি সূর্য দেবতার প্রতি খুব বিশ্বাসী এবং শ্রদ্ধাশীল ছিলেন । কোমর পর্যন্ত জলে দাড়িয়ে তিনি সূর্যকে অর্ঘ্য অর্পণ করতেন । এবং সূর্য দেবতার কৃপার কারনেই তিনি বিশ্বের অন্যতম শক্তশালী যোদ্ধা ছিলেন । মনে করা হয় এর থেকে শুরু হয়েছিল ছট পূজো । 


       ছট পূজোর উপবাস শুরু হয় "না হায় খাই" নামক একটি  অনুষ্ঠান দিয়ে । ব্রত শুরু হওয়ার প্রথম দিন বাড়ি ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে পবিত্র করা হয় । এই দিনে উপবাসিরা খাঁটি নিরামিষ আহার খান । এই দিনেই উপবাসিরা কুমড়ো শাক, সবজি, মুষুর ডাল ও ভাত খান । 


      ছট পূজোর উপবাসের দ্বিতীয় দিন সারাদিন উপোস থাকার পর সন্ধ্যা বেলা খাবার খাওয়া হয় । একে "খরনা" অনুষ্ঠান বলে । 


     এবং তৃতীয় দিনে উপবাসিরা সন্ধ্যায় নদীর ধারে দাঁড়িয়ে সূর্যকে জল দিয়ে অর্ঘ্য দেয় । এছাড়াও একটি বাসের ঝুড়িতে ময়দা দিয়ে বানানো ঠেকুয়া , চালের লাড্ডু , আঁখ  এবং বিভিন্ন ফলমূল রাখা হয় । 


 ছট পূজোর শেষ দিনে উপবাশিরা সূর্যোদয়ের আগে নদী বা পুকুরে যায় । এবং সূর্যোদেবতাকে অর্ঘ্য দেয় । পূজোর পরে উপবাশীরা কাঁচা দুধের সরবত ও কিছু প্রসাদ গ্রহণের মাধ্যমে এই উপবাস ভঙ্গ করেন। এই অনুষ্ঠানটিকে "পরান" বলা হয় ।


    ছট পূজোর উপবাস খুবই কস্টসাধ্য এতে সকল উপবাশিদের সমস্ত সুযোগ সুবিধা ত্যাগ করতে হয় । উপবাশীদের মাটিতে কম্বল এবং চাদর বিছিয়ে ঘুমোতে হয় । মহিলারাই এই উপবাস সাধারণত করে থাকেন ।

নবীনতর পূর্বতন