বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান : প্রবাদপ্রতিম শিক্ষাপ্রতী সমাজসংস্কারক ও বঙ্গীয় রেনেসাঁর অগ্রদূত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান বীরসিংহ গ্রাম টি অতঃপ্রোত ভাবে বাংলার ইতিহাস এবং মানুষের জীবনের সাথে জড়িয়ে আছে ।
চলুন জেনে নিই এই গ্রাম টির অজানা ইতিহাস ।
পথ নির্দেশ: ট্রেনে হাওড়া থেকে পাসকুরা এসে সেখান থেকে ঘাটাল গামী বাসে করে পৌঁছতে হবে বীরসিংহ মোর । বীরসিংহ নেমে ভগবতী বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে বাদিকে একটু খানি এগোলেই ডান হাতে চোখে পড়বে বিদ্যাসাগরের জন্মস্থান ।
১৮২০ সালের ২৬ শে সেপ্টেম্বর , ১২২৭ বঙ্গাব্দের ১২ই আশ্বিন বিদ্যাসাগরের জন্ম হয় এখানে । তার জন্মের সময় বীরসিংহ গ্রাম হুগলি জেলার খীরপাই মহকুমায় অন্তর্গত ছিল। পরবর্তী কালে ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে চন্দ্রকোনা ও ঘাটাল থানা মেদিনীপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত হলে বীরসিংহ মেদিনীপুর জেলায় চলে আসে
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী "আত্মচরিত" এ তিনি বলেন " বীরসিংহ গ্রামে আমার জন্ম হইয়াছে কিন্তু এই গ্রাম আমার পিতৃপক্ষীয় বা মাতৃপক্ষীয় পূর্বপুরুষদের বাসস্থান নহে । জাহানা বাঁধের ঈশান কোণে তথা হইতে প্রায় তিন ক্রোশ অন্তরে বনমালীপুর নামের যে গ্রাম আছে উহাই আমার পিতৃপক্ষীয় পূর্বপুরুষদের বহুকালের বাসস্থান ।"
ঈশ্বচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বাসস্থান তথা আতুর ঘর ও দেখতে পাওয়া যাবে এই স্থানে । বিদ্যাসাগরের পিতামহ রামজয় তর্কভূষণ , হুগলি জেলার বনমালীপুর থেকে এখানে এসে বসবাস করেন। তিনি বিদ্যাসাগরের মাতা এবং পিতার জন্য একটি জমি ও বাড়ির ব্যাবস্থা করেন বীরসিংহে। এখানেই বিদ্যাসাগরের জন্ম হয়।
পরবর্তী কালে বিদ্যাসাগর এই বাড়িটি সংস্কার করে একটি মাটির দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেন। ১৮৬৯ সালের মার্চ মাসে এক বিধ্বংসী আগুনে বাড়িটি ভস্মিভূত হয়। সেই বছরেরই জুন মাসে মুচিরাম ও মনমহিনির বিবাহ সংক্রান্ত বিবাদের জেরে বিদ্যাসাগর চিরতরে বীরসিংহ ছেড়ে চলে যান ।
এরও পূর্বে বিদ্যাসাগর এখানে একটি মেয়েদের বিদ্যালয় ও একটি সান্ধ্য বিদ্যালয় স্থাপন করেন । ১৮৯০ সালে বিদ্যাসাগরের মাতা ভগবতী দেবীর নামে একটি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। ১৯৩৩ সালে বার্জ মেদিনীপুরের জেলা শাসক থাকা কালীন বিদ্যাসাগরের জন্মস্থানে একটি ফলক লাগান । এরপর ১৯৩৭ সালে বিদ্যাসাগরের আবাস স্থলে তার নামাঙ্কিত স্মৃতিরক্ষা সমিতির উদ্যোগে একটি স্মৃতি মন্দির তৈরির কাজ শুরু হয় যা ১৯৪০ সালের ১৭ই মার্চ উদ্ভোধন করা হয় ।
বিদ্যাসাগর মহাশয় যে বাড়িতে জন্মেছিলেন সেই বাড়িটি কেমন ছিল তার সঙ্গে পর্যটক দের পরিচয় করাতেই পুনরায় ২৪সে সেপ্টেম্বর ২০১৯ সালে এই স্মৃতি মন্দিরটি সংরক্ষণ ও সংস্কার করা হয়। এবং যেখানে তিনি ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন সেই স্থানটি সুনির্দিষ্ট করে দেখানোর জন্য সেখানে একটি ছোট মন্দির নির্মাণ করা হয় । স্মৃতি মন্দির সংলগ্ন স্থানে একটি গ্রন্থাগার ও সংগ্রহশালা নির্মাণ করা হয় । সংগ্রহশালায় ছোট ছোট পুতুলের দ্বারা বিদ্যাসাগরের জীবনী সুন্দরকরে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । এবং সেখানে ব্যাবহার করা সামগ্রী যেমন ধাতু নির্মিত পেপার ওয়েট , বইপত্র , স্টিলের ট্রাংক , পাণ্ডুলিপি , মানিব্যাগ , বাঁধানো দাত, ভিজিটিং কার্ড, তম্রফলক ছাড়াও তার বংসতালিকাও সংরক্ষিত করে রাখা হয়েছে ।
বিদ্যাসাগর মহশয়ের জন্মস্থানে মূলত তিনটি একতলা বাড়ি আছে ,বামদিকের ঘরটিতে সামনেই দেখতে পাবেন মা ভগবতীর কোলে বালক ঈশ্বরচন্দ্রের এক সুন্দর মূর্তি । এছাড়াও এখানে আছে বিদ্যাসাগর মহশয়ের কিছু জরুরী সার্টিফিকেট , ও কিছু অমূল্য ফটোগ্রাফ ।
মাত্র ৪ বছর ৯ মাস বয়সে ছোট্টো ঈশ্বরচন্দ্রকে সনাতন বিশ্বাসের পাঠশালায় । পরে তার দাদু তাকে কলিকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের পাঠশালায় ভর্তি করান । এই পাঠশালার কিছু অংশ আজও দেখতে পাওয়া যায় । কিন্তু পাঠশালাটির অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ ।
কবে খোলা থাকে : বিদ্যাসাগর স্মৃতি মন্দির বৃহস্পতি বার ছাড়া বাকি সব দিন সকাল ১১টা থেকে সন্ধে ৬ টা অবধি খোলা থাকে ।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের জন্যেই আজ আমাদের বাংলা ভাষা সুগঠিত ও পরিপূর্ণ । আজ বাংলা ভাষা পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্ঠো ভাষা হিসেবে পরিচিত । তাই সকলকে তার জন্মস্থান একবার ঘুরে আসার অনুরোধ রইলো ।