পুরী : বাচ্চাদের গরমের ছুটি হক অথবা পুজোর ছুটি , অথবা অ্যানুয়াল পরীক্ষা এর পরে শীতের ছুটি , নাহয় বাবা জগন্নাথ এর টানে বছরে একবার হলেও মন পুরী এর দিকে ছোটে । অথচ পুরীর কাছে ৬০০ বছরের ইতিহাস বয়ে নিয়ে আসা , এক অপূর্ব শিল্পস্থাপত্তের কথা অনেকেরই অজানা ।
একসময় ছিল মন্দির তারপর দুর্গ তারও পরে সৈন্যদের আবাস স্থল, প্রায় ৬০০ বছরের ইতিহাসের বোঝা নিয়ে আজও দাড়িয়ে আছে উড়িষ্যার কুরুমবেরা ফর্ট । যেখানে লুকিয়ে রয়েছে ইতিহাসের অচেনা অধ্যায় । সাধারণত পুরীর যাতায়াতের পথে পশ্চিম মেদিনপুরের দাতন এর কাছেই পরে এই ফোর্ট টি ।
দুর্গের কথা উঠলে মাথায় যে রাজকীয় কিলা এর ছবি ফুটে ওঠে , কুরুমবেরা ঠিক তা নয় । "কুরুম" শব্দটির অর্থ হলো পাথর ও "বেরা" শব্দটির অর্থ হলো দেওয়াল । অর্থাৎ পাথরের তৈরি দেওয়াল অথবা কিলা। অসংখ্য ছোট ছোট ঘর ও পাথরের তৈরি থাম নিয়ে তৈরি এই দুর্গ টি । ল্যাটেরাইট পাথরের তৈরি এই করুমবেরা দুর্গ ৩০০ ফুট লম্বা ও ২২৫ ফুট চওড়া ।
অজানা ইতিহাস : ১৪৩৮ থেকে ১৪৭০ সালের মধ্যে ওড়িশার রাজা কপিলেন্দ্রদেবের আমলে নির্মিত হয় এই দুর্গ। গজপতি বংশের রাজা কপিলেন্দ্রদেবের রাজত্ব বিস্তৃত ছিল বর্তমান হুগলি জেলার দক্ষিণ অংশ মান্দারণ থেকে দক্ষিণ ভারতের মাদ্রাজ পর্যন্ত।
প্রথমে আফগান সুলতানরা দখল করেন এ দুর্গ। অতঃপর ঔরঙ্গজেবের আমলে আফগানরা পরাজিত হলে মোগল সম্রাটের হাতে আসে সে দুর্গ। বাংলা এবং উড়িষ্যার বহু মন্দির মন্দির ভেঙে মসজিদ বানানোর ফরমান আসে, বাদ যায়নি এই দুর্গের ভেতরকার মন্দিরটিও, একেবারে দুর্গের ভেতরের মাঝে জলাধারের মতো যে ভাঙা অংশটি রয়েছে (যাকে যজ্ঞবেদীও বলা হয়), দেখলে বোঝা যায়, সেটি কোনো মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ, যদিও অনেকের এতে ভিন্নমত আছে । তবে তিন গম্বুজের ঐ স্থাপত্যখানি যে মসজিদ সেটাও আন্দাজ করা খানিক সহজই।
তাহের খানের অধীনে সেনাদের আশ্রয় শিবির হয়ে ওঠে কুড়ুমবেড়া। সেই থেকে মন্দির বদলে যায় দুর্গে।পরে এই দুর্গে মারাঠারাও ঘাঁটি তৈরি করেছিল বলে মনে করা হয়। বেশ কয়েকজন গবেষক সে কথা জানিয়েছেন।
মাকড়া পাথরে তৈরী অপূর্ব এই সৌধের প্রাঙ্গণের পশ্চিম দিকে রয়েছে তিন গম্বুজ যুক্ত মসজিদ। একদা জেলা গেজেটিয়ারে লেখা হয়েছিল, সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে ১৬৯১ খ্রিস্টাব্দে জনৈক মহম্মদ তাহির এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। ১৯৯০ সালে কুড়ুমবেড়া আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া কুরুমবেরা অধিগ্রহণ করে।
যাবেন কিভাবে : করুমবেরা ফোর্ট এ আসতে হলে আপনাকে দক্ষিণ পূর্ব রেল দরে চলে আসতে হবে খড়গপুর এ । সেখান থেকে বাস এ করে কষিয়ারী, সেখান থেকে আবার বাস এ করে কুকাই , সেখান থেকে টোটো করে ৪ কিলোমিটার দূরে হলো এই করুমবেরা ফোর্ট । করুমবেরা ফোর্ট সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৫ টা অবধি খোলা থাকে ।
অপূর্ব সুন্দর এই স্থাপত্য , কেবল একটি ঐতিহাসিক স্থান এ নয় , এক মনোরম প্রাকৃতিক স্থল ও বটে । পুরোটা পাথরের তৈরি হলেও ভাবতে অবাক লাগে , যে আজও এই দুর্গ মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে , যদিও কিছুটা বয়সের ছাপ তো তারও পড়েছে । যারা পুরী গেছেন অথচ কুরুমবেরা ফোর্ট এর কথা শোনেননি তাদের প্রতি সমবেদনা । এর পরে যখন পুরী ঘুরতে যাবেন , অবশ্যই দুর্গটি ঘুরে আসবেন ।