কুমারী পূজো করলে কি ফল পাওয়া যায় । এই পূজো কেনো করা হয়

 


 বিশেষ প্রতিবেদন : সনাতন শাস্ত্রমতে কুমারী পূজো হলো অনধিক ষোলো বছরের অরজঃস্বলা কুমারী মেয়ের পূজা। বিশেষত দুর্গাপূজার অঙ্গরূপে এই পূজা ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এই পূজো অনুষ্ঠিত হয়। 

         

             প্রতিবছর দুর্গা পূজোর মহা অষ্টমী পূজোর শেষে এই কুমারী পূজো করা হয় । তবে নবমী পূজোর দিন ও এই পূজো অনুষ্ঠিত হতে পারে । কথিত আছে কুমারী পূজো ছাড়া হমযজ্ঞ করেও দুর্গা পূজার সম্পূর্ন ফল পাওয়া যায় না ।  

       হিন্দু শাস্ত্রমতে কুমারী পূজার উদ্ভব হয় বানাসুর বধ করার মধ্য দিয়ে। গল্পে বর্ণিত রয়েছে, বানাসুর এক সময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করায় বাকি বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন। সে সকল দেবগণের আবেদনে সাড়া দিযে় দেবী পুনর্জন্মে কুমারীরূপে বানাসুরকে বধ করেন। এরপর থেকেই মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয় । 

         

       কুমারী পূজোর ফলের কথা বলে  শেষ করা যাবে না । যোগিনী তন্ত্র গ্রন্থে শিব পার্বতীকে বলেছেন এই পুজোর ফলে ত্রিলোক জয় করা যায়। হিন্দু শাস্ত্রে ৯ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু কন্যা দের পূজোর উপযোগী বলা হয়েছে । 

      পুরাণে উল্লেখ আছে যে কন্যা পুজোর জন্য শুধুমাত্র ৩ থেকে ৯ বছর বয়সী মেয়েদের আমন্ত্রণ জানিয়ে পুজোর আসনে বসানো হয়। এর চেয়ে বেশি বয়সী কন্যাদের নির্বাচন করা উচিত নয়। কুমারী পুজোয় দশভুজা খুবই প্রসন্ন হন। এছাড়া যজ্ঞ ও দান-ধ্যানের চেয়ে কুমারী পুজোয় বেশি সন্তুষ্ট হন দেবী দুর্গা। 

        

         বয়স অনুসারে কুমারীর নামকরন ও সেই কুমারীকে পূজো করলে কি কি ফল পাওয়া যায় তা বলা হয়েছে সনাতন শাস্ত্রে , জেনে নিন ।

       

২ বছর বয়সী কন্যা :

২ বছর বয়সী কন্যার নাম সরস্বতী। এই কুমারী পূজো করলে দুঃখ , দারিদ্র্য ও শত্রু নাস হয়  ।

 

  ৩ বছর বয়সী কন্যা :

    তিন বছর বয়সী কন্যার নাম ত্রিধামূর্তি । এই কুমারী পূজো করলে আয়ু বৃদ্ধি , ধনাগম ও বংশবৃদ্ধি হয় । 

        

৪ বছর বয়সী কন্যা :

 চার বছর বয়সী কন্যার নাম কালিকা। কন্যাপূজায় ৪ বছর বয়সী কুমারী মেয়েকে  অন্ন প্রদান করলে মহা কল্যাণ বয়ে আসে বলে মনে করা হয়। তাকে পুজো করে দেবী সুখ ও সমৃদ্ধি প্রদান করেন। এই বয়সী কুমারীকে কল্যাণী দেবী বলে মনে করা হয়। 

 

 ৫ বছর বয়সী কন্যা :

পাঁচ বছর বয়সী কন্যার নাম সুভকা । এই কুমারীর পূজো করলে দুঃখ নাশ হয় । কন্যা পুজোয় ৫ বছরের মেয়ের পুজো করা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত শুভ। ৫ বছর বয়সী একটি কুমারীর পুজো স্বাস্থ্য এবং সুখের দিকে পরিচালিত করে। তিনি দেবী রোহিণী নামে পরিচিত। যিনি দেবী পার্বতীর বোন। 

          

 ৬ বছর বয়সী কন্যা :

ছয় বছর বয়সী কন্যার নাম ঊষা । এই কুমারীর পূজো করলে শত্রুনাস হয়। ৬ বছর বয়সী মেয়ের পুজো করলে জ্ঞান এবং বিদ্যা দান করেন। একটি ৬ বছরের কুমারীকে কালিকা দেবী হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

        

৭ বছর বয়সী কন্যা :

সাত বছর বয়সী কন্যার নাম মালিনী। এই কুমারীর পূজো করলে ধন , ঐশ্বর্য্য লাভ হয় ।


৮ বছর বয়সী কন্যা :

আট বছর বয়সী কন্যার নাম কুজ্জীকা ।  ৮ বছর বয়সী কন্যাকে দেবী শাম্ভবীর রূপে পুজো করা হয়। বলা হয় এই বয়সি কন্যাকে পুজো করলে খ্যাতি এবং প্রতিপত্তি  আসে।

  

 ৯ বছর বয়সী কন্যা :

নয় বছর বয়সী কন্যার নাম কালসৌন্দর্বা । এই কুমারীর পূজো করলে দারিদ্র্য ও শত্রু বিনষ্ট হয় ।

 যাঁরা ৯ বছর বয়সী এক নাবালিকাকে পুজো করেন, তাঁরা দুর্গার আরাধনার ফল পেয়ে থাকেন। এই বয়সের কন্যাকে দুর্গার রূপে ধরা হয়। এই ব.সির কন্যাকে পুজো করলে ভক্তরা কঠিন কাজেও সফল হন এবং শত্রুদেরও পরাজয় করতে সক্ষম হোন। নবরাত্রির নবম দিনে ৯ নাবালিকাকে পুজো করে খাওয়াতে পারেন তাহলে দেবীর বিশেষ কৃপা লাভ করবেন আপনি। 


 ১০ বছর বয়সী কন্যা :

দশ বছর বয়সী কন্যার নাম অপরাজিতা । এই কুমারীর পূজো করলে সকল অভীষ্ট সিদ্ধ হয় ।


            এভাবে১১ বছর বয়সী কন্যার নাম রুদ্রানি,১২ বছর বয়সী কন্যার নাম ভৈরবী , ১৩ বছর বয়সী কন্যার নাম মহালক্ষ্মী , ১৪ বছর বয়সী কন্যার নাম পীঠনায়িকা, ১৫ বছর বয়সী হলে দেবী ক্ষেত্রজ্ঞা ও ১৬ বছরের কন্যাকে অম্বিকা দেবীরূপে পুজো করা হয়।  

   

     কুমারী পূজোর দিনে কুমারীকে স্নান করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয় । হাতে দেওয়া হয় ফুল , কপালে সিঁদুরের তিলক ও পায়ে আলতা । সঠিক সময়ে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে এই পূজো করা হয় ।  চার দিকে মুখরিত হয় শঙ্খ ও উলুধ্বনি। আর মায়ের স্তবস্তুতি। আর এই দিন কুমারী বালিকার মধ্যে শুদ্ধ নারিরুপ চিন্তা করে তাকে দেবী জ্ঞানে পূজো করেন ভক্তরা । 

   কুমারী মেয়েকে মনে করা হয় সর্ববিদ্যা স্বরূপিনী । ভক্তদের বিশ্বাস কুমারীকে ভোজন করালে ত্রিলোক ভোজনের ফল লাভ হয় ।

নবীনতর পূর্বতন