বিশেষ প্রতিবেদন : বাড়িতে বসে পুরোহিত ছাড়া কি লক্ষ্মী পূজো করা যায় ? এতে কি লাভ হবে ? জেনে নিন কিভাবে নিজে হতে মন্ত্র সহ ভক্তি ভরে পূজো করলে মা লক্ষ্মীর কৃপা বজায় থাকবে আপনার উপর ।
দুর্গা পূজো শেষ হতেই বাঙালির ঘরে মা লক্ষ্মীর পূজোর তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় । অনেকে আবার কালি পূজোর দিনও মা লক্ষ্মীর পূজো করেন। লক্ষ্মী ধন-দৌলত, অর্থ, শৌর্য, সুখ, সমৃদ্ধির দেবী। এমনিতে বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপে মা লক্ষ্মী পূজিত হন। তবে আশ্বিনের শেষ পূর্ণিমাতেও পূজিত হন মা লক্ষ্মী। যা কোজাগরী লক্ষ্মী নামে পরিচিত। এমনিতে সব পুজোর মতো পুরোহিত দিয়েই লক্ষ্মী পুজো করা যায়। তবে লক্ষ্মীপুজো এমন পুজো যাতে গৃহস্থ নিজেও পুজো করতে পারেন।
লক্ষ্মী পূজো সাধারণত প্রতিমা , সরা বা লক্ষ্মীর ঝাঁপি তে হয়ে থেকে । পূর্ব বঙ্গীয়রা সাধারণত সরা বা প্রতিমায় লক্ষী পূজো করেন। পশ্চিম বঙ্গীয়রা লক্ষ্মীর ধান পাত্রে বা ঘটেও পূজো করেন । তবে আপনার বাড়ির যা নিয়ম রয়েছে আপনি সেই মতেই পূজো করবেন ।
পূজোর পূর্বে পূজোর স্থান পরিষ্কার করে ধুপ দীপ জ্বালিয়ে দেবেন । মা লক্ষীকে একটি উচু বেদি তে বসবেন । মনে রাখবেন সাদা অথবা কালো কাপড় মা লক্ষীর পুজোয় ব্যাবহার করা যায়না । সাদা বা কালো কাপড় বাদ দিয়ে যেকোনো রঙের কাপড়ের উপর মা লক্ষ্মীকে বসবেন । মা লক্ষ্মীর সামনে আলপনা আঁকতে ভুলবেন না । আলপনা আঁকতে না পারলেও অন্তত দুটো পা নিশ্চই আঁকবেন । মনে রাখবেন লক্ষ্মী পুজোয় কাসর, ঘণ্টা বা কোনো রকমের বাদ্য যন্ত্র বাজানো যাবে না ।
পূজোর পূর্বে সুদ্য জামাকাপড় পরে ,স্থির মনে সুধ্যাসনে বসে পূজো শুরু করবেন ।
প্রথমে , আচমন করবেন তিন বার হাতের তালুতে এক বিন্দু জল নিয়ে "ওং বিষ্ণু ওং বিষ্ণু ওং বিষ্ণু" তিন বার বলে মুখে নিন এবং তারপর আর একবার জল নিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন ।
এরপর , মাঝের তিনটি আঙুল দিয়ে প্রথমে ঠোঁটের উপরিভাগ ও নিচের ভাগ স্পর্ষকরে সারা শরীরে হাত বুলিয়ে নিন । এতো অল্প জল নেবেন যেনো টা গলার নিচে না যায় ।
এরপর , সূর্যার্ঘো দিন , অর্থাৎ সূর্যের উদ্দেশ্যে একটু জল দিন । যেকোনো পূজো করার আগে আমাদের প্রাণ শক্তি সূর্যকে পূজো করার নিয়ম । তাই জল দেবার জন্য ঠাকুরের সিংহাসনে একটি ছোটো তামার পাত্র সর্বদাই রাখবেন । সূর্যের নাম করে কুশি থেকে জল নিয়ে তামার পাত্রে দেবেন । এবং অর্ঘ্য দেবার সময় অবশ্যই মন্ত্র জপ করবেন "এষো অর্ঘ্যঃ ওঁ শ্রী সূর্যায় স্বাহা "
এরপর, একটু গঙ্গাজল , পূজোর আসন পূজোর ফুল , নৈবেদ্যো ইত্যাদি উপকরনের উপর ছিটিয়ে দেবেন ।
এরপর , মা লক্ষ্মীর ঘট স্থাপন করবেন । লক্ষ্মী দেবীর সামনে সামান্য ধান ও একটু মাটি ছড়িয়ে তার উপর জল ভরা ঘট স্থাপন করবেন । ঘটের গায়ে সিঁদুর দিয়ে মঙ্গল চিহ্ন বা স্বস্তিকা চিহ্ন এঁকে নেবেন ।সাথে একটি বিজোড় সংখ্যার আম্র পল্লব ঘটের মধ্যে রাখবেন এবং তার উপর একটি কলা বা হরিতকি দিয়ে উপরে একটি ফুল দেবেন । ইচ্ছে করলে ঘটের উপরে একটি মালাও আপনি দিয়ে পারেন ।
এরপর ,আপনাকে লক্ষ্মী পূজোর জন্য সংকল্প করতে হবে। তিল , তুলসী , হরিতকি , ত্রিপত্র ও সামান্য জল নিয়ে আপনাকে এই মন্ত্র জপ করতে হবে। "ওঁ বিষ্ণুরোম তংসদ অদ্য আশ্বিন মাসি শুক্ল পক্ষে পূর্ণিমা তিথৌ অমুক গোত্র (নিজ গোত্র বলুন ) শ্রী অমুক ( নিজের নাম ) দেবশর্মা পরম শান্তি তথা আশীর্বাদ লাভ কামো অহং শ্রী লক্ষ্মীমহং পূজয়িষ্যে।"
এরপর , আপনাকে মা লক্ষ্মী দেবীর ধ্যান করতে হবে । এই সময় যে মন্ত্র জপ করবেন টা হলো _ " ওঁ পাশাক্ষমালিকাম্ভোজ-সৃণিভির্ষাম্য-সৌম্যয়োঃ।পদ্মাসনাস্হাং ধ্যায়েচ্চ শ্রিয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্।। গৌরবর্ণাং সুরুপাঞ্চ সর্বলকার - ভূষিতাম্ । রৌক্মপদ্ম-ব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেন তু ।।" মন্ত্রটি পাঠ করতে পারলে ভালো , না পারলে লক্ষ্মী দেবীর মূর্তি মনে মনে কিছুক্ষন কল্পনা করে নিন ।
এরপর মা লক্ষ্মীকে আপনার ঘরে আহ্বান করুন "ওঁ লক্ষ্মীদেবী ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ ইহ তিষ্ঠ ইহ তিষ্ঠ ইহ সন্নীদেহী ইহ সন্নিরুদ্ধস্য অত্রোধিষ্ঠান কুরু মম পূজান গৃহাণ।
এরপর আপনাকে করতে হবে মানস পূজা অর্থাৎ আপনাকে মনে মনে কল্পনা করতে হবে মা লক্ষ্মী আপনার দেওয়া নৈবেদ্য গ্রহণ করছেন ।
এরপর একে একে আপনার নৈবেদ্য মা কে উৎসর্গ করুন । এরপর মা কে একটি চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে দেবেন , এবং পুষ্পাঞ্জলি দেবেন । " ওঁ নমস্তে সর্বাদেবানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে । যা গতিস্তাৎ প্রপন্নানং সা মে ভুয়াত্ত্বদচনাৎ।।এষ সচন্দনগন্ধ পুষ্পাঞ্জলি ওঁ শ্রীং শ্রী শ্রী লক্ষ্মীদেব্য নমঃ।
পুষ্পাঞ্জলির পর নারায়নের উদ্দেশে দুটি তুলসী পাতা ও একটু ফুল ঘটে দেবেন তারপর ইন্দ্র ও কুবেরের নামে দুটি ফুল ঘটে দেবেন ।
শেষে মা লক্ষ্মীকে ভক্তি ভরে প্রণাম করবেন । এরপর ধুপ দীপ প কর্পূর জ্বালিয়ে মা লক্ষ্মীর আরতি করবেন । পূজো শেষে মা লক্ষ্মীর পাঁচালী পড়বেন অবশ্যই ।
এই ভাবেই আপনি বাড়িতে নিজেই কোজাগরী লক্ষ্মী পূজো করতে পারেন । যদি মন্ত্র না পড়তে পারেন তাহলে মন দিয়ে পূজো করলেই এই পূজো সম্পূর্ণ হয় ।