বিশেষ প্রতিবেদন : দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত একটি জনবহুল দেশ হলো ভারত । দেশটির সরকারি নাম ভারতীয় প্রজতন্ত্র । ভৌগলিক আয়তনের বিচারে এটি দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ও বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র । জনসংখ্যার দিক থেকে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল একটি দেশ এবং বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র । ভারতের পশ্চিম সীমান্তে রয়েছে পাকিস্তান। উত্তর পূর্বে রয়েছে চিন নেপাল ও ভুটান। এবং পূর্বে রয়েছে বাংলাদেশ ও মায়ানমার অবস্থিত।
ভারত নামটির উৎপত্তি চন্দ্রবংশীয় পৌরাণিক রাজা "ভরতের" নামানুসারে। কথিত আছে এই অঞ্চলটি রাজা "ভরত" দান করেছিলেন বলে এর নাম ভারতবর্ষ । ভারত রাষ্ট্রের আর এক নাম "ইন্ডিয়া"। ইংরজী এই "ইন্ডিয়া" শব্দটি এসেছে সিন্ধু নদের আদি ফারসি নাম "হিন্দু" থেকে। এছাড়াও প্রাচীন গ্রীকেরা ভারতীয়দের "ইন্দো" বলে সম্মোধন করতো । যার অর্থ হলো ইন্দাস নদীর অববাহিকার আদিবাসী। স্বাধীনতার পর ভারতের সংবিধান ও লোকমুখে ভারত নামটি প্রচলিত হয় । এছাড়া মধ্যেযুগে উত্তর ভারত অর্থে ফারসি হিন্দুস্তান শব্দটিও ব্যাবহৃত হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই হিন্দুস্থান শব্দটি সমগ্র ভারত অর্থেও ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।
সুপ্রাচীন কাল থেকে ভারতীয় উপমহাদেশ অর্থনীতিক সমৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত। ঐতিহাসিক সিন্ধু সভ্যতা এই অঞ্চলেই গড়ে উঠেছিল। মুঘল সম্রাট শাহ জাহানের আমলে এইখানেই স্থাপিত হয়েছিল বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য তাজ মহল। নানা ইতিহাস প্রসিদ্ধ বাণিজ্য পথ এই অঞ্চলের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য সভ্যতার বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রক্ষা করত। হিন্দু , বৌদ্ধ , জৈন ও শিখ বিশ্বের এই চার ধর্মের উৎসভূমি এই ভারত । খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দে ইসলাম ধর্ম ও খ্রীষ্ট ধর্ম ও ইহুদি ধর্ম এই দেশে প্রবেশ করে ও ভারতীয় সংস্কৃতিতে বিশেষ ভাবে প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। অষ্টদশ শতাব্দীর প্রমার্ধ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ধীরে ধীরে ভারতীয় ভূখন্ডের অধিকাংশ অঞ্চল নিজেদের শাসনাধীনে আনতে সক্ষম হন। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যোভাগে এই দেশ পুরোদুস্তর একটি ব্রিটিশ উপনিবেশে পরিণত হয় । অতঃপর এক সুদীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৪৭ সালে ভারত একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্ররূপে আত্মপ্রকাশ করে । ১৯৫০ সালে সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে ভারত একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় ।
ভারতের আয়তন প্রায় ৩২,৮৭,২৬০ বর্গকিলোমিটার। এবং ভারতের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৩৫,২৬,৪২,২৮০ জন। বর্তমানে ভারত ২৮টি রাজ্য এবং ৮ টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল নিয়ে গঠিত একটি সংসদীয় সাধারণতন্ত্র । ভারতের অর্থব্যবস্থা বাজারি বিনিময় হারের বিচারে বিশ্বে দ্বাদশ। এবং ক্রয় ক্ষমতার সমতার বিচারে বিশ্বে চতুর্থ বৃহ্তম দেশ।
১৯৯১ সালে ভারত সরকার গৃহীত আর্থিক সংস্কার নীতির ফলোস্রুতিতে আজ আর্থিক বৃধিহারের বিচারে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক ব্যাবস্থাগুলির মধ্যে দ্বিতীয়।
সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারত একটি ধর্মীয়বহুল ,বহুভাষিক ও বহুজাতিক রাষ্ট্র ।
মানব বসতির পাশাপাশি বন্য প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের নানা বৈচিত্র্যও এই দেশে লক্ষ্য করা যায় । ইন্দো - হিমালয় পরিবেশে অবস্থিত ভারত । জীব বৈচিত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন এটি । ১৮ টি মহা বৈচিত্রপূর্ণ রাষ্ট্রের একটি এই দেশ । পৃথিবীর ৭.৬% স্তন্যপায়ী , ১২.৬% পাখি , ৬.৬% সরীসৃপ , ৪.৪% উভচর , ১১.৭% মাছ ও ৬.০% সপুষ্পক উদ্ভিদের বাসস্থান এই ভারত । ভারতের জাতীয় পশু রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার , জাতীয় পাখি ময়ূর । এই মহাবিশ্বের অর্ধেক দেখা হয়ে যায় গোটা ভারত দর্শনে ।
ভারতবর্ষে আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে প্রচুর পরিমাণে । ভারতের এরকম দশটি সাংস্কৃতিক পর্যটন কেন্দ্রের কথা চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক ।
১) বেনারস : প্রথম স্থানে আছে বেনারস । গঙ্গার পাশের এই স্থানটি অসংখ্য মন্দির , প্রচুর ঘাট, রং বেরঙের বাজার ও গেরুয়া ধরি সদগৃহের জন্য বিখ্যাত । এটিকে ভারতের পবিত্রতম স্থান বলে মানা হয়। এখানে এলে গঙ্গা বক্ষে নৌবিহার অবশ্যই করবেন । ঘুরে দেখুন এখানকার বাজার, ময়রার দোকানএর মিষ্টিও চেখে দেখতে পারেন । তবে অবশ্যই সন্ধ্যে বেলায় গঙ্গা তীরে গঙ্গা আরতি দেখতে ভুলবেন না ।
২) উদয়পুর : দ্বিতীয় স্থানে আছে উদয়পুর । রোমান্টিক লেকের শহর উদয়পুর সবচেয়ে ভালো ভাবে দেখা যায় লেকে নৌকায় চেপে । এর। মূল আকর্ষণ হলো সিটি প্যালেস কমপ্লেক্স এবোগ লেকে মাঝে জগ মন্দির । লেকের পাশে গঙ্গার ঘাটের বাগৌড়িকি হাবেলী দেখতে একদম ভুলবেন না । এটি ১০০ রুম প্রচুর অঙ্গন এবং অসংখ্য গৌরবময় ফেস্কো সম্মিলিত একটি হবেলি । উদয়পুর থেকে হিল স্টেশন "মাউন্ট আবু" একদিন ঘুরে আসতে পারবেন আপনি । এখানে দেখতে পাবেন দিলওয়ালে টেম্পল এর সূক্ষ খোদাই কার্য ।
৩) জয়পুর : গোলাপী শহর জয়পুর রয়েছে তৃতীয় স্থানে । অসাধারণ সমস্ত প্যালেস , মনুমেন্ট ও হাভেলিতে পরিপূর্ণ এই জয়পুর। এখানকার মূল আকর্শন হলো আমের ফোর্ট । এখানেই আছে জনপ্রিয় হওয়া মহল এবং সিটি প্যালেস । এছাড়াও নানান বাজার যা আপনি হেঁটেই দেখে নিতে পারেন
৪) কলকাতা : চতুর্থ স্থানে আছে কলকাতা। কলকাতার ইতিহাস জানতে হলে ঘুরে নিতে পারেন বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল , রয়টার্স বিল্ডিং । এছাড়াও এখানে আছে "জাদুঘর" , "বিড়লা প্লানেটরিয়ম" , "সাইন্স সিটি" , "নিকো পার্ক" , "আলিপুর চিড়িযাখানা" । এখানেই আছে রবিদ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম স্থান "জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি" । আছে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় মন্দির দক্ষিণেশ্বরের মা ভবতারিনির মন্দির ,কালীঘাট এর মা কালীর জাগ্রত মন্দির । যারা বই পড়তে ভালোবাসেন তারা ঘুরে আস্তে পড়েন কলেজ স্ট্রিট থেকে যা বই প্রেমীদের কাছে স্বর্গের সমান । এছাড়াও এখানে প্রচুর মিউজিয়াম অবগ একাধিক মন্দির রয়েছে।
৫) ম্যাইশর : পঞ্চম স্থানে আছে আছে ম্যাইশর । এখানকার ম্যাইশর প্যালেস যার দিক থেকে আপনি চোখ ফেরাতে পারবেন না । আরো আছে জগমোহন প্যালেস যা বর্তমানে একটি আর্ট গ্যালারি । এই শহরে আরো ৫ টি প্যালেস আছে , আরো আছে বেশ কয়েকটি লেক , গার্ডেন এবং মন্দির ।
৬) ফোর্ট কোচি : ষষ্ঠ স্থানে আছে ফোর্ট কোচি । কেরালার জনপ্রিয় স্থান হলো ছোট রত্নখন্ডের মতন কোচির দুর্গ । এনকারকুলাম থেকে নৌকায় চরে মাত্র তিন টাকা দিয়ে পৌঁছে যাবেন এই পিছিল পর্তুগিজ ধাঁচের শহরে এবং উপভোগ করুন নিজের মনের মতন সময়। এছাড়াও আছে ম্যাইশর প্যালেস যার দিক থেকে আপনি চোখ ফেরাতে পারবেন না । আরো আছে জগমোহন প্যালেস যা বর্তমানে একটি আর্ট গ্যালারি । এই শহরে আরো ৫ টি প্যালেস আছে আরো আছে বেশ কয়েকটি লেক , গার্ডেন এবং মন্দির ।
৭) ভোপাল: সপ্তম স্থানে আছে ভোপাল । ব্যাস্ত পুরনো বাজার ও সুন্দর মসজিদের সমারোহ এখানে দেখতে পাবেন , যা আপনাকে মুঘল দের সময়ে নিয়ে যাবে । মুঘলেরা তাদের উত্তরাধিকার রেখে গেছে এশিয়ার সবচেয়ে বৃহত্তম মসজিদ "তাজ - উল - মসজিদ" এর আকারে। এখানকার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ হলো মতি মসজিদ । যেটি স্থাপত্যের দিক থেকে দিল্লির যামা মসজিদের মতন । এছাড়া শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে আছে ভিম্বেক্তা । প্রাচীন রক সেল্টার ও পেইন্টিংয়ের জন্য বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট ।
৮) ভুবনেশ্বর এবং পুরী: আকর্ষণীয় মন্দির ও প্রাচীন ঐতিহ্যের জন্য অষ্টম স্থানে আছে পুরী । ভুবনেশ্বর এ রয়েছে প্রায় ৭০০ মন্দির । একাদশ শতকের "লিঙ্গরাজ" মন্দির , দশম শতাব্দীর "মুক্তেশর" মন্দিরের অতিচমৎকার খোদাই কার্য । এছাড়াও একটু জনপ্রিয় ও অপূর্ব সুন্দর মন্দির হলো "রাজা রানী" মন্দির । এখানকার মূল আকর্ষণ হলো সমুদের ধারের পুরীর জগনাথ দেবার মন্দির । আর সবচেয়ে নিখুঁত ভাবে খোদাই করা মন্দির হলো কোনারকের মন্দির যা পুরী থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
৯) তাঞ্জাভুর , তিরুচিলাপল্লী এবং মদুরাই : নবম স্থানে আছে তাঞ্জাভুর , তিরুচিলাপল্লী এবং মাদুরাই । মন্দির কিভাবে একটি শহরের ঐতিহ্যকে তুলে ধরে তার অন্যতম নিদর্শন হলো এটি । তাঞ্জাভুরের বৃহদৃষের মন্দির এবং তাঞ্জাভুরের মারাঠা পালেস ঘুরে অবশ্যই দেখবেন । তিরুচিলাপল্লীতে শহরের সীমান্ত বরাবর দন্ডায়মান সপ্তদশ শতকের "রক ফোর্ট" দেখে আসতে একেবারে ভুলবেন না । অবশেষে অবশ্যই দেখে আসুন মিনাক্ষি অম্পন টেম্পল বা গেট ওয়ে টাওয়ার ।
১০) আমেদাবাদ: দশ নম্বরে আছে আমেদাবাদ । এই শহরের আসল স্বাদ পেতে হলে আপনাকে বেরিয়ে পড়তে হবে আমেদাবাদ এর হেরিটেজ নাইট ওয়াক এ । নানান হাবেলি ও মনুমেন্ট দেখার পর শেষ করবেন সুস্বাদু খাবার দিয়ে । নানা বয়ন শিল্পের সুক্ষতার এক ঝলক দেখে নিতে পারেন "ক্যালিও মিউজিয়াম" এ । শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পুস্পবাটি নদীর তীরে অবস্থিত মথেধার সূর্য মন্দির । এছাড়াও পাটনের দিকে দেখতে পাবেন প্রাচীন সিড়িওয়ালা কুয়ো । এখান থেকে ট্র্যাডিশনাল "পটলো শাড়ি" সংগ্রহ করতে একদম ভুলবেন না ।