ভারত ও কানাডার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যে ফাটল ধরা পড়েছে তাতে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে দু’দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক। শঙ্কিত বণিকমহলে একটাই প্রশ্ন, কূটনীতির এই জটিলতা বাণিজ্যে কতটা প্রভাব ফেলবে? দুই দেশের আমদানি এবং রফতানি ব্যাহত হলে খুব স্বাভাবিকভাবেই জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় সরাসরি তার প্রভাব পড়বে। ভারত ও কানাডার মধ্যে শিক্ষার ক্ষেত্রে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব রয়েছে।
কানাডার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩ লক্ষ ১৯ হাজার ভারতীয় শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। ২০২১ সালে এই পড়ুয়ারা কানাডার অর্থনীতিতে ৪৯০ কোটি মার্কিন ডলারের অবদান রেখেছেন। ট্রুডোর দেশে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যায় ভারতীয়রা সবার শীর্ষে রয়েছেন। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি দাঁড়াচ্ছে তাতে প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা কতটা পাওয়া যাবে তা নিয়ে তাঁরাও চিন্তিত। ভারত এবং কানাডা একে অন্যের থেকে কোন কোন জিনিস আমদানি এবং রফতানি করে এদেশ থেকে— ওষুধ, ফার্মা পণ্য, পোশাক, জৈব রাসায়নিক, লোহা, ইস্পাত, গয়না, বিভিন্ন পাথর এবং প্রকৌশলী সরঞ্জাম ওই দেশে যায়। পাল্টা কানাডার থেকে ভারত বিভিন্ন ডাল, লোহার স্ক্র্যাপ, খনিজ, নিউজ প্রিন্ট, কাঠের শয্যা, বিভিন্ন শিল্প রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব না মিটলে স্বাভাবিকভাবেই এই পণ্যগুলির জোগান কমবে।
কানাডায় বর্তমানে ৩০টি ভারতীয় কোম্পানির ব্যবসা রয়েছে। এই কোম্পানিগুলোর মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৪০ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা। এই বিনিয়োগ আরও বাড়ার আশা করা হচ্ছিল। আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক, পেটিএম, জোমাটো, নাইকা, ডেলহিভেরি, উইপ্রো-ইনফোসিসের মতো কোম্পানি এই তালিকায় ছিল। কিন্তু এখন প্রশ্ন এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে কি আর নতুন করে ইনভেস্টমেন্ট হবে? আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের অবশ্য দাবি, দুই দেশের বাণিজ্য নিয়ে কোনও প্রতিযোগিতা নেই। কারণ অর্থনৈতিক দিক থেকে এত বড় লোকসান কানাডা কিছুতেই মেনে নিতে চাইবে না। যতক্ষণ না পর্যন্ত ভারত এইসব পণ্যের বিকল্প ব্যবস্থা করতে পারছে ততক্ষণ হয়তো ঝুঁকি নিতে রাজি হবে না নয়া দিল্লিও।