শিক্ষাই জীবন পরিবর্তনের সূচক- বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮ তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বললেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস

শিক্ষা জীবন পরিবর্তনের সূচক।জ্ঞানকে কার্যক্রমে রূপান্তরিত করতে হবে।কী করতে হবে আর কী করা যাবে না সেটাই বড় কথা’। শুক্রবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮ তম সমাবর্তনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে পড়ুয়াদের এই উপদেশই দিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে উঠে শিক্ষা মূলক ভাষণ দেওয়া ছাড়া অন্য কোন প্রসঙ্গ নিয়েরাজ্যপাল একটিও শব্দ উচ্চারণ করেন নি।


এদিনের সমাবর্তনে দীক্ষান্ত ভাষণ দেন অমিতাভ ঘোষ।এবারের সমাবর্তনে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও সঙ্গীতজ্ঞ পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীকে সাম্মানিক ডি লিট প্রদান করা হয়।এছাড়াও বিজ্ঞানী শুভাশিস চৌধুরী ও অধ্যাপক সুমন কুমার ধরকে ডি এস সি দেওয়া হয় ।বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮ তম সমাবর্তনে প্রবেশ এবং প্রস্থানের সময় রাজ্যপাল নিজেও সকলকে সম্ভাষণ করেন। নাতিদীর্ঘ বক্তব্যে রাজ্যপাল পড়ুয়াদের শিক্ষা, রুচি আর ব্যবহারিক প্রয়োগের উপর গুরুত্ব আরোপের কথা বারে বারে স্মরণ করিয়ে দেন ।তিনি বলেন,জীবন এবং প্রকৃতিই শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।


শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যের কথা বোঝাতে গিয়ে রাজ্যপাল নানা কাহিনী শোনান । তাঁর সেই কাহিনীতে সচিব থাকাকালীন আদিবাসী জীবনের বাস্তবতা যেমন ছিল তেমনি অন্য কাহিনীতে ছিল কৌতুকের দ্যুতি। রাজ্যপাল বলেন,’তিনি তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কালচারাল সেক্রেটারি থাকাকালীন একবার শোনেন কিছু নাকি ঝামেলা হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে। তাই সেখানে কঠোরভাবে সিকিউরিটি পাশ নিয়ে প্রবেশ করতে হচ্ছিল। সেখানে অমিতাভ বচ্চন পাশ ছাড়াই প্রবেশ করতে গেলে তাকে প্রমাণ দিতে বলা হয়।ওই সময়ে তিনি ’দীওয়ার’ ফিল্মের হিট সংলাপ বলে পার পান।



একইভাবে আমজাদ আলি খান সংগীতের মূর্চ্ছনা আর মল্লিকা সারভাই নৃত্যের মুদ্রা দেখিয়ে নিজেদের প্রমাণ করেন।তবে স্বয়ং কালচারাল সেক্রেটারি পাশ দেখাতে পারেন নি। তাকেও প্রমাণ দেখাতে বলে হয়। তিনি ক্ষুণ্ণ হলে তাকে বলা হয় অমিতাভ সহ সকলেই প্রমাণ দিয়েছেন।তিনি তখন বলেন; ‘ওঁরা কারা?’এই কথা শুনে সিকিউরিটির অফিসাররা তখন বলেন,আপনি যে কালচারাল সেক্রেটারি তাতে আর কোনো সন্দেহ নেই।আপনি যেতে পারেন’।


তবে এদিন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এক অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী থাকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়।অনুষ্ঠান শুরু হল জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে।আবার রাজ্যপাল মঞ্চ ছেড়ে যাওয়ার সময় মাঝপথে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হল।সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দু’বার কেন জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হল তা অবশ্য কারুরই বোধগম্য হল না।


সমাবর্তন অনুষ্ঠানের শেষে রাজ্যপাল সি ডি আনন্দ বোস কৃষকদের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।সেই ইচ্ছা পূরণের জন্য জেলা কৃষি দফতরের পক্ষথেকে রাজ্যপালকে বর্ধমান ২ নম্বর ব্লকের বড়শুলে কৃষিদপ্তরে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে তিনি এলাকার ৩৫ জন কৃষকের সঙ্গে মিলিত হন।রাজ্যপাল চাষীদের সঙ্গে মিলিত হয়নে বলেন,’আমিও কৃষক পরিবারের সন্তান। বহুদিন আমি কৃষিদপ্তরের দায়িত্বভারও সামলেছি’।কোভিড সময়কালে চাষীরা যেভাবে ফসল উৎপাদন করেছেন তারজন্য তিনি এখানকার চাষিদেরও ধন্যবাদ দেন।

আলোচনা চলাকালীন চাষিদের তিনি আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার উপর জোর দেওয়ার কথা বলেন।ইণ্ট্রিগ্রেডেট ফার্মিংয়ের কৃষকদের উৎসাহিত করে রাজ্যপাল বলেন, কম জায়গায় ও কম জলে কিভাবে চাষ করতে হবে তা জানা খুবই দরকার।পাশাপাশি তিনিয়চেন্নাই ও হায়দ্রাবাদের চাষিদেরমত রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সার কৃষিতে প্রয়োগের জন্যও জোর দেবার কথা বলেন।জৈব সারে চাষের ব্যাপারে যদি এখানকারচাষীরা আগ্রহী হন,তবে তাদের সেখানে নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান রাজ্যপাল।বর্ধমান ২ নম্বর ব্লকের বিডিও সুবর্ণা মজুমদার বলেন,রাজ্যপাল চাষীদের সঙ্গে সাক্ষাৎয়ের আগ্রহ প্রকাশ করায় জাতীয় সড়কের ধারে বড়শুলে ব্যবস্থা করা হয়।



এখনে তিনি চাষীদের সঙ্গে কথা বলে চাষের পদ্ধতি জানার চেষ্টা করেন।প্রয়োজনে চাষীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার বিষয়ে সাহায্যের কথা বলেন।রাজ্যপাল যখন বড়শুলে চাষিদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তখন সেখানে জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা, পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন,বিডিও সুবর্ণা মজুমদার সহ কৃষি দপ্তরের আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন বড়শুলে।কৃষি নিয়ে স্বয়ং রাজ্যপালের সঙ্গে মতামত বিনিময় করতে পরে খুশী বড়শুলের চাষীরা।জেলা শস্য সুরক্ষা আধিকারিক বিশ্বজিৎ মণ্ডল বলেন, চাষীদের সঙ্গে কথা বলে রাজ্যপালও খুশী হয়েছেন।

নবীনতর পূর্বতন